ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট-এর এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জির (এনআরসি) মাধ্যমে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত ভারতের অনুপ্রেরণাদায়ী ধারণাকে বিপন্ন করে তুলছে। ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে বিভাজন উসকে দিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি’ শিরোনামের ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, দেশটির ২০ কোটিরও বেশি মুসলমানের আশঙ্কা, প্রধানমন্ত্রী একটি হিন্দু রাষ্ট্র বানাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) এক টুইটে তারা ভারতকে ‘অসহিষ্ণু দেশ’ উল্লেখ করে তাদের প্রচ্ছদটি শেয়ার করে লিখেছে, ‘যেভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও তার দল বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রকে বিপন্ন করছে।’
ইকোনমিস্টের নিবন্ধের সূত্রে ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শতকের ৮০-র দশক থেকে অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের আন্দোলন থেকে উত্থান হওয়া বিজেপি ভারতে ধর্মীয় এবং জাতীয় পরিচয় নিয়ে বিভাজন সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টায় মত্ত। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বলছে, ‘বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করতে ভারতীয়দের নাগরিকপঞ্জি বানানোর ওই পরিকল্পনা দেশটির ১৩০ কোটি মানুষকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তালিকায় নাম সংশোধন, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এবং সংশোধনী বছরের পর বছর ধরে উত্তেজনা জিইয়ে রাখতে পারে।’
ইকোনমিস্ট দাবি করেছে, এ ধরনের ইস্যু জনগণকে বিভ্রান্ত করে অর্থনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দিতে ভূমিকা রাখবে। গত বছরের নির্বাচনে বিজেপির নিরঙ্কুশ জয়ের পর থেকে ‘ভারতের অর্থনীতি ভয়াবহ মাত্রায় নিম্নমুখী’ উল্লেখ করে এ নিয়ে উদ্বেগের কথাও জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
ইকোনমিস্টের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইকোনমিস্ট ইন্টিলিজেন্স ইউনিটের গত সপ্তাহে প্রকাশিত ২০১৯ সালের ‘গণতন্ত্র সূচকে’ও ভারতের বড় ধরনের অবনমন হয়েছে। সূচকে মোট ১০ পয়েন্টের মধ্যে ভারতের স্কোর ৬ দশমিক ৯। সব মিলিয়ে ১৬৫টি রাষ্ট্র ও দুইটি অঞ্চলের মধ্যে দেশটির অবস্থান ৫১। এতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভারতের এই পতনের পেছনে ক্ষয়িষ্ণু নাগরিক স্বাধীনতাকে প্রাথমিক কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দিল্লির জন্য আরও অস্বস্তির বিষয় হচ্ছে, ইকোনমিস্ট ইনটেলিজেন্স ইউনিট জানিয়েছে, ২০২০ সালে গণতন্ত্রের সূচকে ভারত আরও নামবে। কারণ গত ডিসেম্বরে দেশটির পার্লামেন্টে মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকত্ব সংশোধন বিল পাস হয়েছে। এখন তা আইনে পরিণত হয়েছে। এই আইন বিভেদকামী বলে মনে করছে সংগঠনটি।
সারা বিশ্বে ৫৪টি দেশের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা খারাপ হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে। তালিকায় এক নম্বরে আছে নরওয়ে। জার্মানি ১৩ নম্বরে, বাংলাদেশ ৮০, পাকিস্তান ১০৮, চীন ১৫৩ ও দক্ষিণ কোরিয়া ১৬৭ তম স্থানে আছে।