করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় মাস্কসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী বোঝাই করে যুক্তরাষ্ট্রে একটি কার্গো বিমান পাঠিয়েছে রাশিয়া। ৩১ মার্চ গভীর রাতে রাশিয়ার চাকালোভস্কি বিমানঘাঁটি থেকে রওনা দেওয়া অ্যান্টোনভ অ্যান ১২৪-১০০ সামরিক বিমানটি বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান জানিয়েছে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মানবিক সহায়তা পাঠানোর প্রস্তাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাড়া দেওয়ার পর বিমানটি রওনা দেয়।
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারিতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন মার্কিন নাগরিকেরা। দেশটিতে ১ লাখ ৮৮ হাজারের বেশি আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন চার হাজারের বেশি মানুষ। মার্কিন বিজ্ঞানীরা বলছেন, যেভাবে ভাইরাসটি বিস্তৃত হচ্ছে তাতে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে মানবিক সহায়তা পাঠানো রাশিয়ায়ও মাস্ক ও চিকিৎসা সামগ্রীরও সংকট রয়েছে। বুধবার সেখানে নতুন করে ৪৪০ জন আক্রান্ত শনাক্তের মধ্য দিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দুই হাজার ৭৭৭ জনে পৌঁছেছে। মস্কোর মেয়র সার্জেই সোবিয়ানিন গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আক্রান্তের সরকারি হিসাব মহামারির ব্যাপকতাকে খাটো করে দিতে পারে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর আগে রুশ বিমানটি আয়ারল্যান্ডের শ্যানন বিমানবন্দরে যাত্রাবিরতি নিয়ে জ্বালানি সংগ্রহ করবে। রুশ টেলিভিশনে প্রচার করা বিমানটির অভ্যন্তরীণ ছবিতে চিকিৎসা সামগ্রীতে বোঝাই কার্ডবোর্ড বাক্স দেখা গেছে।
তবে রুশ সহায়তা গ্রহণ করায় বিতর্ক শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচকেরা। তারা বলছেন, ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের দায়ে নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর চেষ্টায় গতি আনতে এসব সামগ্রী পাঠাচ্ছে রাশিয়া।
গত সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দৃশ্যত ভুল করে বলে ফেলেন, রুশ বিমান ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে। প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে মস্কোর সহায়তা আসার কথা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া আমাদের বিশালকার বিমান বোঝাই করে চিকিৎসা সামগ্রী পাঠিয়েছে। এটা খুবই চমৎকার’। পরে ক্রেমলিনের এক ঘোষণায় জানানো হয়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ওই আলাপে যুক্তরাষ্ট্রে মানবিক সহায়তা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাম্প কৃতজ্ঞতার সঙ্গে এই মানবিক সহায়তা গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে কোনও ধরনের অজুহাত ছাড়াই সবাই আক্রান্ত হচ্ছে আর বিশ্বজুড়ে সহযোগিতা ও পারস্পরিক সাহায্য ছাড়া কোনও বিকল্প নেই’। পেস্কোভ বলেন, ‘পুতিনের বিশ্বাস, মার্কিন নির্মাতারা চিকিৎসা সামগ্রী তৈরিতে গতি আনতে পারবেন। আর প্রয়োজন পড়লে তারা রাশিয়াকেও সহায়তা করতে পারবেন’।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইতোমধ্যে ইতালিতে বিমানভর্তি মাস্ক ও অন্য চিকিৎসা সামগ্রী পাঠিয়েছে রাশিয়া। সেখানে সামরিক যানে করে চিকিৎসাকর্মীও পাঠিয়েছে মস্কো। ওই যানে লেখা রয়েছে, ‘রাশিয়া থেকে ভালোবাসা নিয়ে’।