করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ৩০ দিনের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। আঞ্চলিক জোটটির ২৬ সদস্য দেশের বাইরে আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যেও এ ব্যবস্থা কার্যকর হবে। কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বুধবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, উল্লিখিত সময়ের মধ্যে ইইউ বহির্ভূত দেশ থেকে কেউ ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশ করতে পারবে না। মূলত ইতালি, স্পেন ও ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এমন ব্যাপকভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আঞ্চলিক এ জোটটিকে।
ইইউ-এর সদস্য দেশগুলোর নাগরিক, তাদের পরিবারের সদস্য, দীর্ঘমেয়াদি বাসিন্দা, কূটনীতিক, স্বাস্থ্যকর্মী ও পণ্য সরবরাহকারীরা এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন। অর্থাৎ, বিদেশে বসবাসরত ইউরোপীয় নাগরিক ও সংশ্লিষ্টরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশাধিকার পাবেন। তবে এ ধরনের বিশেষ পরিস্থিতি ছাড়া সাধারণভাবে সীমান্ত বন্ধ থাকবে।
বুধবার ইইউ জুড়ে এ পদক্ষেপ নেওয়ার আগেই নতুন সংক্রমণ ঠেকাতে নতুন করে কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘোষণা দেয় জার্মানি ও ফ্রান্স। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমান্ত মঙ্গলবার থেকে ভ্রমণকারীদের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। মুদি দোকান বাদে জার্মানির বেশিরভাগ দোকান ও ভেন্যু বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভাইরাস ঠেকাতে সামাজিক যোগাযোগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বিস্তৃত করছে ইউরোপের দেশগুলো।
উৎপত্তিস্থল চীনের পর করোনা ভাইরাসের নতুন কেন্দ্র হয়ে উঠেছে ইউরোপ। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৯৮ হাজার ৭১২ জন। মারা গেছে সাত হাজার ৯৮৯ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান (ডব্লিউএইচও) টেড্রোস আডানম গেব্রিয়াসিস বলেছেন, এই বৈশ্বিক মহামারি ঠেকাতে যথেষ্ট উদ্যোগ নিচ্ছে না সরকারগুলো। সন্দেহভাজন সব রোগীকে পরীক্ষার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এক টেলিভিশন ভাষণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া নাগরিকদের ঘরের বাইরে বের হতে নিষেধ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। স্কুল, ক্যাফে, জরুরি নয় এমন দোকান আগেই বন্ধ করে দেওয়া হলেও তা যথেষ্ট হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, চিকিৎসকেরা পরিস্থিতির তীব্রতার বিষয়ে সতর্ক করার পরও পার্ক ও বাজারে মানুষদের জড়ো হতে দেখছি। রেস্টুরেন্ট ও বারগুলো বন্ধের নির্দেশ মানছে না। আগামী ১৫ দিন নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, না মেনে চললে শাস্তির মুখে পড়তে হবে। ইতালি ও স্পেনের মতো নিয়ন্ত্রণ আরোপের ঘোষণা দিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য রক্ষার যুদ্ধে আছি।’
জার্মানিতে ক্লাব, বার, অবকাশ কেন্দ্র, চিড়িয়াখানা, খেলার মাঠ বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল। নির্দিষ্ট সময়ে রেস্টুরেন্ট খোলা রাখা গেলেও টেবিলগুলোর মাঝে ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বার্লিনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সবাই যত তাড়াতাড়ি এসব নিয়ম মেনে চলবে, তত তাড়াতাড়ি আমরা এই ধাপের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো।