শিগগিরই করোনা ভাইরাসের প্রকোপ না কমলে নির্দিষ্ট সময়ে দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই পরিস্থিতিতে সরকারের ফার্স্ট ট্র্যাক মধ্যে প্রকল্পের অন্যতম এ প্রকল্পের কাজ ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
জানা গেছে, করোনার কারণে অনেক শ্রমিক ছুটিতে চলে যাওয়ায় গত ২৭ মার্চ থেকে প্রায় বন্ধ হয়ে যায় এ প্রকল্পের কাজ। পরিস্থিতি এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে স্বাভাবিক হলে দ্রুত কাজ শুরু করা যাবে। তবে ছুটির সময় দীর্ঘায়িত হলে জটিল অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
বন্ধ হওয়ার আগে প্রকল্পের ৩৯টি সেতুর মধ্যে ২৫টির নির্মাণকাজ শুরু হয়। রেললাইন বসানোর জন্য রাস্তা ভরাটের কাজও শুরু হয়। এ মুহূর্তে ৩৩ শতাংশের মতো কাজ শেষ হয়েছে।
রেলওয়ের প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রেলওয়ের চুক্তি হয়। পরে জমি পেতে দেরি হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজও দেরিতে শুরু হয়। প্রকল্পের কাজ ভালোভাবে চলছিলো। তবে করোনার কারণে বর্তমানে কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে আছে। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কাজ আবারও শুরু করা যাবে। তবে এর বেশি হলে নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে না।
রাজধানী ঢাকা এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার এবং কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত আরও ২৮ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। দীর্ঘ সমীক্ষা শেষে ২০১০ সালে এই নতুন রেলপথ স্থাপনের জন্য সরকার ওই বছরের ৬ জুলাই প্রকল্পের ডিপিপি অনুমোদন দেয়। এরপর ২০২১ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকাল জুলাই ২০১০ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।
প্রকল্পটি ফার্স্ট ট্র্যাকের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল। প্রথম দফায় এই প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ হবে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ। রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ আপাতত হবে না। এটা হবে দ্বিতীয় ধাপে। সরকারের নিজস্ব এবং এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থে বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে এডিবি থেকে পাচ্ছে ১৫০ কোটি ডলার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল কক্সবাজারের ঝিলংজা মৌজার চৌধুরীপাড়ায় দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
২০১৮ সালের মার্চ ও ১ জুলাই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করে। এই রেলপথ যাবে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ওপর দিয়ে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার মূল রেললাইন এবং ৩৯ দশমিক ২ কিলোমিটার লুপ লাইনসহ ১৪০ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। এই পথে থাকবে ৩৯টি মেজর ব্রিজ এবং ১৪৫টি মাইনর ব্রিজ ও কালভার্ট। বিভিন্ন শ্রেণির ৯৬টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হবে। হাতি চলাচলের যেসব পথ রয়েছে সেগুলোর জন্য নির্মাণ করা হবে আন্ডারপাস ও ওভারপাস। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত থাকবে নতুন স্টেশন দোহাজারী, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজারে। রামুতে হবে জংশন। আর কক্সবাজারের রেলস্টেশনে নির্মাণ করা হবে আইকনিক ইন্টারমডেল টার্মিনাল বিল্ডিং। স্টেশনটি হবে ঝিনুক আকৃতির।