চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস আজ শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি)। ৩২ বছর আগে ১৯৮৮ সালে নগরের লালদীঘি ময়দানে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গুলি চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ৫ আসামি সাবেক ৫ পুলিশ সদস্যকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় স্পেশাল জজ মো. ইসমাঈল হোসেনের আদালত এ রায় ঘোষণা করেন।
১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি বিকালে লালদীঘি ময়দানে সমাবেশের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। সমাবেশে যাওয়ার পথে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহর লক্ষ্য করে গুলি করে পুলিশ। শেখ হাসিনাকে রক্ষা করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মারা যান ২৪ জন নেতাকর্মী।
এ ঘটনায় ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। আদালতের আদেশে সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি প্রথম এবং অধিকতর তদন্ত শেষে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়। অভিযোগপত্রে তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাসহ আট পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন- তৎকালীন সিএমপি কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, কোতোয়ালী জোনের পেট্রোল ইন্সপেক্টর (পিআই) জে সি মণ্ডল, কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মোস্তাফিজুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, শাহ মো. আবদুল্লাহ ও মমতাজ উদ্দিন। এদের মধ্যে তিন আসামি মারা গেছেন। ২০০০ সালের ৯ মে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।
২৪ জানুয়ারি লালদীঘির ঘটনায় নিহতরা হলেন- মো. হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, স্বপন কুমার বিশ্বাস, এথেলবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন চৌধুরী, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া, মো. কাসেম, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ ও শাহাদাত।
গণহত্যা মামলার বাদির পরিবারের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বাদি ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শহিদুল হুদার ছেলে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ এরশাদ হোসেন বলেন, ১৯৯২ সালে ৫ মার্চ ঘটনায় জড়িত ৪৬ আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পর থেকে সিএমপির তৎকালীন কমিশনার মির্জা রকিবুল হুদা আমার বাবাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। গত ২০ জানুয়ারি আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে আমরা অন্য সবার মতো সন্তুষ্ট।
তিনি বলেন, এ মামলার রায়ে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে। রায়ে প্রমাণ হলো, অপরাধী যে-ই হোক এদেশের মাটিতে বিচার একদিন হয়ই। ২০০৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শহিদুল হুদা।
আলোচিত এ মামলার মোট সাক্ষী ১৬৭ জন। গত ১৪ জানুয়ারি ৫৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য কার্যক্রম শেষ হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. অনুপম সেন, সাংবাদিক অঞ্জন কুমার সেন ও হেলাল উদ্দিন চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী মামলায় সাক্ষ্য দেন।