বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের একটি স্ট্যাটাস নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে।
সরকারি কর্মকর্তাদের বেশিরভাগই যে অপরিচিত কল ধরেন না তা নিয়ে সরকারের সাবেক এই শীর্ষ কর্মকর্তার এক স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশর্ট এখন ফেসবুকে ঘুরছে। আর তাতে সরকারি কর্মকর্তাদের ওই বেশিরভাগকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখছেন নেটিজেনরা।
‘সহকর্মীদের সঙ্গে প্রবাস থেকে কথা বলতে গিয়ে বুঝলাম তাদের বেশিরভাগই অপরিচিত কল ধরেন না, মেসেজ পড়ে দেখেন না বা উত্তর দেন না। আমরা কি এ সংস্কৃতি হতে বের হতে পারি না?’
বুধবার (২২ জানুয়ারি) এমন স্ট্যাটাসটি ফেসবুকে দিয়েছিলেন সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব, যিনি প্রশাসনের শীর্ষ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে শেষ কর্মদিবস পার করেন গত বছরের ২৮ অক্টোবর। তার আগে সরকার তাকে আরেক গুরুত্বপূর্ণ পদ বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়, তিনি ওয়াশিংটনে চাকরিরত।
সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই কর্মকর্তার সেই স্ট্যাটাসটির নিচে অনেকেই মন্তব্য করে সরকারি কর্মকর্তাদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং তা ফেসবুকে ভাইরাল করে দিয়েছেন।
সেই স্ট্যাটাসের বিষয়ে অনলাইন মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তা নিজের দেওয়া বলে জানান শফিউল আলম।
পরে আর একটি স্ট্যাটাসও দেন শফিউল আলম।
তিনি লেখেন, ফোন না ধরার সংস্কৃতি: এ নিয়ে আমার একটি পোস্টে কিছু নেতিবাচক কথা লিখেছিলাম। তার একটু ব্যাখ্যা দিচ্ছি।
‘বিদেশ হতে সময়ের ব্যবধানের কারণে ফোন করা খুবই কঠিন। সময় বুঝে হিসাব কিতাব করে ফোন করতে হয়। যখন সেই ফোনটি দেশে যায় তখন তা রূপান্তরিত হয়ে টেলিটক নম্বর হয়ে যায়। ফলে ফোন গ্রাহক বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন, তাই ধরেন না। তারপরও ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়। উদাহরণ, আমি গতকাল রাত ১২.১৪টায় অর্থসচিবকে ভয়ে ভয়ে একটি মেসেজ পাঠালাম। আমি অবাক তিনি সঙ্গে সঙ্গে তার উত্তর দিলেন দেখে। কারণ অত রাতে কেউ জেগে থাকার কথা না।’
সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব লেখেন, দেশে থাকতে আমরা সহকর্মীদের মাঝে এই অ্যাটিকেট-টি চালু করার চেষ্টা করেছি, পরিচিত অপরিচিত সবার ফোন ধরার। না পারলে মেসেজ দেওয়া, তাও না পারলে পরে কল ব্যাক করা। এই নিয়ম মানতে গিয়ে কত বিপদে পড়েছি তার শেষ নেই। তবুও তা অব্যাহত রেখেছি এ পর্যন্ত। তবে আমার অভিজ্ঞতা ও ধারণা আমাদের জেলা প্রশাসকরা এক্ষেত্রে ইতিবাচক নজির রেখে যাচ্ছেন।
‘আমার বন্ধুদের কেউ কেউ অনুযোগ করেছেন আমিও দেশে থাকতে একই কাজ করেছি। অর্থাৎ অনেকের ফোন ধরিনি। এরকমটি হয়ে থাকলে আমি তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমি জেনেশুনে এ কাজটি কখনও করিনি। তবে ভিভিআইপি পরিবেশে বা মন্ত্রিসভা চলাকালে ধরার সুযোগ ছিল না। আবার প্রচণ্ড চাপের সময়ে ধরতে না পারলেও মেসেজ দেওয়ার চেষ্টা করতাম বা পরে ব্যাক করতাম।’
শফিউল আলম আরো লেখেন, মন্ত্রিসভার সদস্য বা ব্যস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে কথা উঠেছে। আমি তাদের মাঝে responsiveness অনেক বেশি দেখেছি। উদাহরণ হিসেবে সাবেক অর্থমন্ত্রী মুহিত স্যারের কথা বলতে পারি। তিনি এক্ষেত্রে
role model.
সবশেষ স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘পুনশ্চ: ফোন নিয়ে পোস্ট দেওয়ার উদ্দেশ্য কাউকে আঘাত দেওয়া নয়, সহকর্মীদের সেনসিটাইজ করা মাত্র।’
উন্নত বিশ্বে ফোন না ধরাটা রীতিমতো অভদ্রতা। কোনো কোনো দেশে তা অপরাধও বটে; মন্তব্য ওয়াশিংটনে দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তার।
তিনি আহ্বান জানিয়েছেন, আসুন আমরা সবাই জনবান্ধব হই, সেবাপ্রার্থীদের ব্যথা বোঝার চেষ্টা করি, তাদের ডাকে সাড়া দেই- অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশ না হলে পরিচিত অপরিচিত সবার ফোন ধরি।
শফিউল আলম ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব শুরু করে ২৮ অক্টোবর শেষ দিন পালন করেন।
তার শেষ কর্মদিবসে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই পদে চার বছরের দায়িত্ব পালনকালে তার স্মৃতি চারণ করেন।
ওই দিন বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে আমার আজ শেষ সেশন ছিল, তাই মন্ত্রিসভা আমাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে।
একজন আমলা হিসেবে কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে সময় পার করা নিয়েও কথা বলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
‘আপনাদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেছি, খুব স্বাচ্ছন্দ্য ফিল করেছি কাজ করতে। আপনারা প্রাইভেট সেক্টরে কাজ করেন, আমরা সরকারি কাজ করি এ রকম কখনও মনে হয়নি। আমরা একসঙ্গে একই কলিগের মতো কাজ করেছি। সবাই মিলে কাজ করেছি। আপনাদের যথেষ্ট সহযোগিতা পেয়েছি আমরা।’
তিনি যে নিজে ফোনে সাড়া দেওয়ার কথার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা অনেক সাংবাদিক প্রশংসা করেছেন তার স্ট্যাটাসের নিচে।