পথে পথে চলছে তল্লাশি। যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হওয়ার আতঙ্ক। তারপরও সব বাধা অতিক্রম করে কৌশলে সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে আজ শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশে অংশ নিতে ফেনীর ১০ হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় অবস্থান করছেন।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল।
জেলা বিএনপি নেতারা জানান, সমাবেশে অংশ নিতে পথে পথে নানা হয়রানি ও গ্রেপ্তার আতঙ্কের পরেও নেতাকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। জেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িতে তল্লাশিসহ বৃহস্পতিবার থেকে ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
দলীয় সূত্র আরও জানায়, শুক্রবার মহাসমাবেশে অংশ নিতে যাওয়ার সময় ঢাকা থেকে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহাসমাবেশে যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর বিসিক এলাকা থেকে গাড়ি তল্লাশি করে ৪ যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই দিন ফুলগাজীর মুন্সিরহাট থেকে ২ জন ও সোনাগাজী থেকে এক যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, এত বাধার পরেও নেতাকর্মীদের আটকে রাখতে পারেনি। মানুষ এখন শুধু এ সরকারের পতনের ক্ষণ গণনা করছে। আমাদের নেতাকর্মীদের পথে পথে পুলিশ হয়রানি করেছে। বাসা-বাড়িতে তল্লাশি করছে। তাদের না পেয়ে পুলিশ স্বজনদের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করছে। গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রশিদ মজুমদার বলেন, শত বাধা উপেক্ষা করেও আমরা এখন নয়াপল্টনে অবস্থান করছি। এখানে হাজার হাজার নেতাকর্মী রাত্রিযাপন করেছি। আশা করি সফল কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আবার বাড়ি ফিরতে পারব।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে দীর্ঘদিন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠ দখলের চেষ্টা করেছে দুই যুগের বেশি ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। তবে আজ শনিবার ঢাকার মহাসমাবেশের মাধ্যমে চলমান আন্দোলনে কঠোর বার্তা দিতে চান দলটি। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এতদিন ধরে মাঠে থাকা ফেনীর তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও এমন আশা নিয়ে সমাবেশে অংশ নিয়েছেন।
ফেনী বিএনপি নেতাদের ভাষ্যমতে, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পাশাপাশি এবার সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া সময়ের দাবি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের আরও সোচ্চার হওয়ার আহ্বান তাদের।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার বলেন, মহাসমাবেশে অংশ নিতে ফেনী জেলা বিএনপির ১০ হাজার নেতাকর্মী গত দুইদিন ধরে বিভিন্ন উপায়ে ঢাকায় এসেছে। এই সমাবেশ থেকেই কঠোর আন্দোলনের বার্তা নিয়ে আমরা স্ব স্ব জেলায় ফিরে আসব এমনটিই আশা করছি।
সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঠিক ধারায় আছে উল্লেখ করে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খন্দকার বলেন, আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া। স্বৈরাচারের পতন নিশ্চিতের জন্য ধীরে ধীরে কঠোর আন্দোলনের দিকে যেতে হয়। সেদিক থেকে বিএনপি সঠিক ধারাতেই আছে। আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা বা সংঘাতের কর্মসূচিতে বিশ্বাসী না। বিএনপি জনসমর্থিত কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারের ওপর জনগণের অনাস্থার বিষয়টি প্রকাশ করছে। আজ মহাসমাবেশ থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেবেন এমনটিই আশা থাকবে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েল বলেন, সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপির চলমান আন্দোলন এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। ইতোমধ্যে তৃণমূল বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে এই সরকারের প্রতি জনগণের অনাস্থার বিষয়টি স্পষ্ট করেছে। আশা করছি কেন্দ্রীয় নেতারা মহাসমাবেশ থেকেই আন্দোলনের যে রূপরেখা তৈরি হয়েছে সে বিষয়ে কঠোর দিকনির্দেশনা দিবে।
ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শুক্রবার আটককৃত ৪ জনকে জুলাই মাসে ফেনীতে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তল্লাশি করা হচ্ছে। কাউকে হয়রানি বা অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেই।
এ প্রসঙ্গে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থোয়াই অংপ্রু মারমা বলেন, যাদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে, বিভিন্ন মামলায় পলাতক রয়েছে তাদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তল্লাশি করা হচ্ছে। এতে হয়রানি বা রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই।
এদিকে শনিবার (২৮ অক্টোবর) সকাল ১০টা পর্যন্ত ফেনী থেকে ঢাকাগামী দূরপাল্লার বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ঢাকাগামী যাত্রীদের মধ্যে চিন্তার ছাপ লক্ষ্য করা গেছে।
উল্লেখ্য, সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে আজ ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও শাপলা চত্বরে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে। জবাবে আওয়ামী লীগ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ ফটকে কর্মসূচি দিয়েছে শান্তি সমাবেশের।