প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক প্যাকেজের বিষয়ে ফখরুল সাহেবের বক্তব্য ‘চোখ-কান থাকতে অন্ধ-বধিরের মতো’ বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত অর্থনৈতিক প্যাকেজ না পড়ে, না বুঝে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল দ্রুত একটি প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
সোমবার (৬ এপ্রিল) ঢাকায় মিন্টু রোডে সরকারি বাসভবন থেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলন করে যে বক্তব্য রেখেছেন, এতে মনে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী যে অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন সেটা না পড়ে, না বুঝে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। আমরা আশা করেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর এই অর্থনৈতিক পাকেজ ঘোষণার পর তারা সরকারকে ধন্যবাদ জানাবে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ধন্যবাদ জানানোর সংস্কৃতিটাই লালন করে না। সে কারণে বিএনপি এবারও চিরাচরিত গতানুগতিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।
এই প্যাকেজ ঘোষণার আগে থেকেই সরকার দরিদ্র, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য নানাবিধ পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, অথচ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে দরিদ্র মানুষের কোন কথা নেই। এখানে দিন আনে দিন খায় এমন মানুষের কোনো কথা নেই- এ ধরনের কাণ্ডজ্ঞানহীন কথা বলেছেন। এই সংবাদ সম্মেলন করার আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের জানা উচিত ছিল, বিএনপির মতো একটি বড় দলের মহাসচিবের মতো দায়িত্বে থেকে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখে বক্তব্য রাখা।
করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে খেটে-খাওয়া মানুষের জন্য সরকারের পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে হাছান মাহমুদ বলেন, সরকারের চলমান ভিজিডি, ভিজিএফ কার্ডের বাইরেও দরিদ্র মানুষ যাতে বিনামূল্যে খাদ্য পায়, সেজন্যই সরকার ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় থেকে ৪৮ হাজার একশ ১৭ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ১৬ কেটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ৩০ থেকে ৪০ লাখ পরিবারকে নগদ সহায়তা দেওয়ার জন্য ৬শ ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর বাইরেও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২৪ টাকা দামের ওএমএসের চাল ১০ টাকা কেজি দরে ঢাকাসহ সারাদেশে দেওয়া হচ্ছে, যাতে দরিদ্র মানুষ এটা কিনতে পারে। এতে মানুষ যে সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছে, স্বস্তিপ্রকাশ করেছে, তা বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকেই জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক এই প্যাকেজে কৃষক, মৎস্যখামারি, হাঁসমুরগি পালনকারীদের ক্ষতি পোষাতেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অথচ মির্জা ফখরুল বলেছেন, এই সমস্ত খাতে কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। মির্জা ফখরুল সাহেব চোখ-কান থাকতেও অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করছেন।
‘স্বাস্থ্যখাতে চলতি বাজেটে ২৫ হাজার পাঁচশ আশি দশমিক ৫৬ কেটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী প্যাকেজ ঘোষণার আগেই পিপিই ও স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থাসহ করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন, যেগুলো মির্জা ফখরুল সাহেব হয়তো জেনেও না জানার ভান করছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই সারা দেশে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি পিপিই বিতরণ করেছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ কার্যত ঘরেই অবস্থান করছে। এবং জনগণের জন্য দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনাও পালন করতে জনগণ সচেষ্ট। কিন্তু সমগ্র দেশের মানুষ যেখানে ঘরে অবস্থান করছে, আমরা দেখতে পেলাম খালেদা জিয়া যেদিন বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে বিশ্ববিদ্যলয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তি পেলেন, তারা মেডিক্যালের সামনে হাজার হাজার মানুষকে জড়ো করলেন, বাড়ির সামনে জমায়েত করলেন। যেখানে ২৬ শে মার্চের জাতীয় সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে, জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন বাতিল করা হয়েছে, অথচ তারা হাজার হাজার মানুষ জমায়েত করেন। তারাই আবার দোষারোপের রাজনেীতি করেন।
মন্ত্রী বলেন, তারা (বিএনপি) পড়ে, জেনে, শুনে পরামর্শ দিতে পারেন, কিন্তু অন্ধের মতো নয়। আমি বিএনপিকে অনুরোধ জানাবো, করোনা ভাইরাসের মহাদুর্যোগ সম্মিলিতভাবে মোকাবিলা করতে হবে। এখন একে অপরকে দোষারোপের, বাদানুবাদের সময় নয়। একে অপরের হাত ধরে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সময়।