‘করোনা ভাইরাসের মতো এত বড় মহামারির মধ্যেও ক্ষমতাসীন দলের দুর্নীতিবাজরা ত্রাণ ও স্বল্পমূল্যের চাল আত্মসাৎ করছেন। সরকারি হিসাবে দেশের খাদ্য গুদামগুলোতে ১৭ দশমিক ৫১ লাখ টন চাল মজুদ আছে। এই পরিমাণ চাল দিয়ে ৩/৪ কোটি মানুষকে ৬ মাস অনায়াসে খাওয়ানো সম্ভব। অথচ মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। ক্ষুধার জ্বালায় রাস্তায় পড়ে থাকছে। সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে আফরোজা খাতুন নামে এক শিশু ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।’
রোববার (১২ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, সরকার যে পরিমাণ চাল বিতরণ করছে তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। মড়ার উপর খাড়ার ঘা হিসাবে যোগ হয়েছে চাল চুরির মহোৎসব। মিডিয়ায় প্রতিদিন যে পরিমাণ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে তারচেয়েও চাল চোরের সংখ্যা বেশি। যেখানে কে বাঁচবে কে বাঁচবে না-তার কোনো নিশ্চয়তা নেই, যেখানে জীবন এখন অনেক বেশি অনিশ্চিত সেখানে কী করে আওয়ামী লীগের লোকজন ত্রাণের মালামাল চুরি করে খায়? লোভ লালসা এদের লজ্জা-শরম, বিবেক-বোধ সবকিছু অন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও স্থানীয় গণমাধ্যকর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যমতে এ পর্যন্ত পাথরঘাটা উপজেলায় ৫৫০ বস্তা, বগুড়ায় ১০০ বস্তা, নাটোরে ১৩ বস্তা, জয়পুরহাটে ৭ বস্তা, যশোরে ৮০ বস্তা, যশোরের মণিরামপুরে ৫৫৫ বস্তা, ঝিকরগাছায় ১ বস্তা, নওগাঁয় ৩৩৮ বস্তা, বাগেরহাটে ১৮ বস্তা, পটুয়াখালীতে ১০ বস্তা, ঝালকাঠিতে ৫০ বস্তা, সিলেটে ১২৫ বস্তা, ময়মনসিংহের ত্রিশালে ১৬ বস্তা, সারিয়াকান্দি উপজেলায় ২৮৮ বস্তা, গাবতলী উপজেলায় ১০০ বস্তা, বগুড়ার শিবগঞ্জ ১৩ বস্তা চাল চুরির তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রায় প্রতিদিনই চাল চুরি নিয়ে নতুন নতুন খবর আসছে।
রিজভী বলেন, রোববার প্রকাশিত একটি খবরে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে সরকারি চাল আত্মসাতের বড় ঘটনা ঘটছে। বুধবার থেকে পূর্ববর্তী এক সপ্তাহে একটি সিন্ডিকেট বস্তা পাল্টে খোলাবাজারে অন্তত: ২০ হাজার বস্তা সরকারি চাল বিক্রি করে দিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে পুলিশ।
তিনি বলেন, ব্র্যাকের সাম্প্রতিক একটি জরিপ বলছে, দেশে চরম দারিদ্র্য অবস্থা আগের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। প্রায় ১৪ শতাংশ মানুষের ঘরে খাবার নেই। ২৯ শতাংশ মানুষের ঘরে আছে মাত্র ১ থেকে ৩ দিনের খাবার। দেশ ‘উত্তম’ আয়ের নাকি ‘মধ্যম’ আয়ের, দেশের অবস্থা এখন ‘মিরপুর’ নাকি ‘সিঙ্গাপুর’ এখন এইসব কাগুজে বিতর্কের সময় নয়। এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, প্রায় তিন কোটি মানুষের ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া। অথচ এর পরিবর্তে জনগণ দেখছে ভিন্ন চিত্র। কথায় বলে ‘কারো ঘর পোড়ে, কেউ আলু পোড়া খায়।
বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের সাধ্যমতো জনগণের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়েছে জানিয়ে রিজভী বলেন, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মতো পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরাও বসে নেই। তারা সাধ্যমতো জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে।