বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী)-এর সাধারণ সম্পাদক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেছেন, গার্মেন্টস মালিকরা প্রণোদনার অর্থ বাড়ানো এবং সে অর্থ নিজেদের অ্যাকাউন্টে নেওয়ার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে শ্রমিকদের ঢাকায় এনেছে। এ ধরনের নিষ্ঠুর কাজ কেবল মালিকরাই করতে পারে।
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রকোপ মেলাবিলায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রতি জোর দেওয়া হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ছুটি ঘোষণাও করেছে। গার্মেন্টসকর্মীদের বেতন নিয়ে যেন মালিকদের সমস্যায় না পড়তে হয়, এজন্য দেওয়া হয়েছে প্রণোদনাও। সরকারের এসব উদ্যোগের মধ্যেই উদ্বেগ বাড়িয়ে হাজার হাজার কর্মীকে কাজে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে শনিবার ঢাকায় আনে গার্মেন্টস মালিকরা। যদিও রাতে গার্মেন্টস আবার বন্ধ ঘোষণা করে বিজিএমইএ।
এসব নিয়ে মুবিনুল হায়দার চৌধুরী রোববার (০৫ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে বলেন, সরকার ভাইরাস সংক্রমণের জন্য ছুটির সময় ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করেছেন। কিন্তু গার্মেন্টস মালিকরা ৫ এপ্রিল কারখানা খুলবে বলে ঘোষণা দেন। এতে লাখ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
সংক্রমণের যে ঝুঁকির কারণে অন্য সব প্রতিষ্ঠানের ছুটি বাড়ানো হলো, গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে সেই ঝুঁকি পূর্ণ মাত্রায় বিদ্যমান। কারণ গার্মেন্টস একটি শ্রমঘন শিল্প। অথচ, মালিকশ্রেণি শ্রমিকদের জীবনের দিকে না তাকিয়ে মুনাফার দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকারও মালিকশ্রেণির স্বার্থে নিজেদের নীতি ঠিক করছে। এর আগেও লকডাউন ঘোষণার পূর্ব-মুহূর্ত পর্যন্ত গার্মেন্টস বন্ধের ব্যাপারে কোনো কথা বলা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী গত ২৫ মার্চ যে ভাষণ দেন, সেখানেও এ ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করেননি। পরে সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ প্রতিবাদ করায় কিছু কারখানা ২৬ মার্চ, কিছু কারখানা ২৭ মার্চ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এবারও একই কাণ্ড ঘটলো। এর মধ্যে বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হবে বলে খোদ সরকারের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর ধারণা করছে। গত দু’দিন ধরে শ্রমিকের এই ঢল রাজপথে দেখা গেছে। পেটের দায়ে এতবড় স্বাস্থ্যঝুঁকি নিতে তারা বাধ্য হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠলে আবার শনিবার (০৪ এপ্রিল) রাতে বিজিএমইএ সভাপতি মালিকদের কারখানা বন্ধের অনুরোধ করেছেন।
মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, শ্রমিকদের সঙ্গে এ এক নির্মম উপহাস। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে যে, সরকারের ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ আরও বর্ধিত করা এবং এর টাকা শ্রমিকদের অ্যাকাউন্টে পাঠানোর সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করে সরাসরি মালিকদের অ্যাকাউন্টে নেওয়ার উদ্দেশ্যে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টির জন্য তারা এ কাজ করছে। মুনাফার উদ্দেশ্যে এ ধরনের নিষ্ঠুর কাজ করা মালিকদের পক্ষেই সম্ভব।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বিবৃতিতে আরও বলেন, কোনো অজুহাতেই শ্রমিক ছাঁটাই চলবে না। অবিলম্বে শ্রমিকদের সবেতন ছুটি ঘোষণা করার জন্য সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাচ্ছি।