ঢাকা: জোটসঙ্গী ১৪ দল ও সহযোগী দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের খুব বেশি সংখ্যক আসনে সমঝোতার সম্ভাবনা নেই। এ দলগুলোকে সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ২৮টি আসন ছাড়তে চায় আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদে জোটসঙ্গী ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির যে আসন রয়েছে বা গত নির্বাচনে যে সংখ্যক আসন ছাড়া হয়েছিল, এবার তার চেয়েও কিছু কম আসন ছাড়তে চায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু জোটসঙ্গী ও সমমনাদের দাবি, বর্তমান সংসদে তাদের যতগুলো আসন রয়েছে, তার চেয়েও বেশ কিছু বেশি।
তবে জোটসঙ্গী ও সমমনারা এ দাবি করলেও আওয়ামী লীগ ওই দলগুলোর নিজস্ব ভোটের হিসাব এবং জনপ্রিয়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কোন কোন আসনে সমঝোতা করা বা কতটিতে করা যায়, সেটা চিন্তা করছে। যেহেতু প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি নেই, তাই কিছু আসনে সমঝোতার কথা চিন্তা-ভাবনা করছে আওয়ামী লীগ।
কারণ সমঝোতা না হলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ওই দলগুলোর প্রার্থীরা জিতে আসতে পারবেন না। তাই কিছু আসনে সমঝোতা করে বাকি আসনগুলো প্রতিটি দলের জন্যই উন্মুক্ত থাকবে এবং সব দলের প্রার্থীই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
যে যার জনপ্রিয়তা দিয়ে জিতে আসবেন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন ২২টি আসনে। এছাড়া নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের ওয়ার্কার্স পার্টি পেয়েছিল তিনটি আসন এবং জাসদ পেয়েছিল দুটি আসন। এরপর উপনির্বাচনে জাসদ আরও একটি আসনে বিজয়ী হয়। এছাড়া একাদশ সংসদে বিকল্পধারা বাংলাদেশ পায় দুটি, জাতীয় পার্টি (জেপি) একটি এবং তরিকত ফেডারেশন একটি।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটসঙ্গী ও সহযোগীদের আসন ছাড়ের সংখ্যা একাদশ নির্বাচনের চেয়ে কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। জাতীয় জাতীয় পার্টিকে এবার ১৫ থেকে ১৮টির মতো আসন ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। আর ১৪ দলীয় জোটসঙ্গীদের ছয় থেকে আটটি আসন ছাড়া হতে পারে। এর মধ্যে কোন দল কয়টি পাবে বা কোন দলের আসন কমে বর্তমান এমপি বাদ পড়বেন, সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, গত তিনটি নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের দলগুলো ও জাতীয় পার্টির ভোটের অবস্থা এবং সাংগঠনিক অবস্থা বিবেচনা করলে যতগুলো আসন ছেড়ে দেওয়া হয়, তা তাদের প্রকৃত অবস্থার চেয়ে বেশি। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল, বার বার এক আসন থেকে দলের প্রার্থীকে সরিয়ে রাখা কঠিন।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো আরও জানায়, আসন ভাগাভাগি নিয়ে জোটসঙ্গী ও সহযোগী দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তা বিভিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে। আসন সমঝোতার বিষয়গুলো নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে জোটসঙ্গী ও সহযোগীরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন এবং আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে আগামী ১৭ ডিসেম্বরের আগে আসন সমঝোতা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা নেই। আসন সমঝোতার মতো এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা হিসাব নিকাশ এবং চিন্তাভাবনা রয়েছে। সর্বশেষ পরিচিতি পর্যবেক্ষণের পর সার্বিক বিষয় বিবেচনা করেই সমঝোতায় আসা আসনগুলোর চূড়ান্ত তালিকা জানানো হবে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এর আগের দিন অথবা ওই দিনই যেসব আসনে সমঝোতা হবে, সেগুলো তাদের জানিয়ে দেওয়া হবে এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হবে।