সিলেটে স্বতন্ত্রদের নিয়ে বেকায়দায় নৌকার কাণ্ডারিরা

সিলেট: বিএনপি বিহীন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় টিকিট পেলেই বিজয় নিশ্চিত ভেবেছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। কিন্তু দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় পাল্টে গেছে সব হিসাব-নিকাশ।

ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া হচ্ছে না নৌকার কাণ্ডারিদের। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত থাকায় সিলেটের বিভিন্ন আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে থাকছেন দলটির মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা।

যে কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে বেকায়দায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে স্বতন্ত্রদের জন্য টেনশনে নৌকার প্রার্থীরা।
সিলেটের ১৯টি আসনে আওয়ামী লীগের নেতারা নৌকার কাণ্ডারিদের বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন। ফলে নৌকার মনোনয়ন পেয়েও স্বস্তিতে নেই আওয়ামী লীগ মনোনীতরা।

সিলেট-১ আসনে আবারো নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেন। কিন্তু এ আসনে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করবেন দলটির টানা তিনবারের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। এ আসনে আরো ২ জন নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

সিলেট-২ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন বিশ্বনাথ পৌর মেয়র ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমান। আসনটিতে শফিকুর রহমাসহ ৭ জন নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

সিলেট-৩ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এ আসনে স্বতন্ত্র থাকছেন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও বিএমএ’র মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল এবং বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সেক্রেটারি আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রকিব মন্টু। এ আসনে আরও ৬ জন ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।

সিলেট-৪ আসনে বর্তমান সংসদ ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমদের সাথে মনোনয়নবঞ্চিত জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য গোলাপ মিয়া স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করবেন। এ আসনে দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন আরও ৭ জন।

সিলেট-৫ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হাফিজ আহমদ মজুমদার প্রার্থী হননি। তাই মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আসনটিতে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ড. আহমদ আল কবীর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে থাকছেন আরও ৭ নেতা।

সিলেট-৬ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদকে ছাড় দেননি কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। এরই মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি। এ আসনে নাহিদকে চ্যালেঞ্জ করে ১৩ জন দলের মনোনয়ন চেয়েছেন।

এছাড়া সিলেট ছাড়াও মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে ১৩টি আসনেও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থীদের সঙ্গে দলীয় নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বৃহস্পতিবার রিটানিং কর্মকর্তার কাছে শেষ দিনে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন।

অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এছাড়া গত ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরিকদল জাপাকে সিলেট-২ আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। যে কারণে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত ছিলেন আসনটির সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এ আসনটি ফের শরিক দলকে ছেড়ে দিলেও জিততে পারেননি জাপার সাবেক এমপি ইয়াহ ইয়া চৌধুরী এহিয়া। তাকে হারিয়ে গণফোরামের মোকাব্বির খান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দু’টি নির্বাচনে দলের প্রতি আনুগত্য থাকায় পুরস্কার স্বরূপ এবার আসনটিতে শফিকুর রহমান চৌধুরীকে নৌকার কাণ্ডারি করা হয়েছে। আসনটিতে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন আরও ৭ জন।

সুনামগঞ্জ-১ আসনে অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার দলীয় প্রার্থী হলেও স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। সুনামগঞ্জ-২ চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল-আমিন চৌধুরী) মনোনয়ন পেয়েছেন। এখানে বর্তমান সংসদ সদস্য জয়া সেন গুপ্তা স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করবেন। সুনামগঞ্জ-৩ আসনে এম এ মান্নান, সুনামগঞ্জ-৪ ড. মুহাম্মদ সাদিক ও সুনামগঞ্জ-৫ আসনে মুহিবুর রহমান মানিক।

মৌলভীবাজার-১ আসনে শাহাব উদ্দিন, মৌলভীবাজার-২ আসনে শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মৌলভীবাজার-৩ আসনে জিল্লুর রহমান, মৌলভীবাজার-৪ আসনে উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ।

হবিগঞ্জ-১ আসনে অ্যাডভোকেট ড. মুশফিক হোসেন, হবিগঞ্জ-২ আসনে ময়েজ উদ্দিন শরিফ রুহেল, হবিগঞ্জ-৩ আসনে আবু জাহির, হবিগঞ্জ-৪ আসনে মাহবুব আলী। এসব আসনে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে স্বতন্ত্রের ব্যানারে নির্বাচনে প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। আজ বৃহস্পতিবার প্রার্থীরা রিটানিং ও সহকারি রিটানিং অফিসারের কাছে মনোনয়ন ফরম দাখিল করবেন।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে বর্তমান মন্ত্রী-এমপিসহ ১৭২ প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতাদের ১৪৮ জন নৌকা পেতে দলের মনোয়ন দাখিল করেন। তাদের মধ্যে ১৯ সৌভাগ্যবানকে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হলেও দলীয় সভানেত্রীর এক ঘোষণাতে তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *