করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকির কারণে হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন সদ্য কারামুক্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গুলশানের নিজ বাসভবন ফিরোজায় তিনি আগামী ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। এসময়ের মধ্যে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনও ধরনের দেখা সাক্ষাৎ করবেন না। তবে চিকিৎসার প্রয়োজনে শুধুমাত্র ডাক্তার এবং তার দেখভালের জন্য বোন সেলিমা ইসলাম এবং ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা এই বাড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন।
খালেদা জিয়ার পরিবার ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বুধবার খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে ফিরোজা আসার সময় পুরোটা রাস্তায় তার গাড়ি ছিল দলীয় নেতাকর্মীদের বেস্টনীর মধ্যে। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে তাকে ব্যক্তিগত ডাক্তার ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী গতকাল রাতে পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে থাকলেও বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) তারা সকালে নিজ-নিজ বাড়িতে চলে যান। তারা চলে যাওয়ার পর থেকে তিনি হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।
খালেদা জিয়ার পরিবার সূত্র নিশ্চিত করেছে,কোয়ারেন্টিন চলাকালে তিনি কোনও নেতাকর্মীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন না। এমনকি তার খাবারও বাড়িতে রান্না হবে। তবে বোনরা চাইলে খাবার নিজ বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে আসতে পারবে।
খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, ‘সকাল থেকে তাকে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আমি এখন তার কাছে যাবো। এসময় দলের নেতাকর্মী কেউ তার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে পারবেন না। এসময়ের মধ্যে শুধুমাত্র ডাক্তার এবং আমি, কানিজ ফাতেমা ওই বাড়িতে যেতে পারবো।’
তিনি আরও বলেন, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে তার খাবার-দাবার তৈরি হচ্ছে। বাইরে থেকে কোনও কিছু নিয়ে যাওয়ার নিষেধ রয়েছে। তবে আমরা চাইলে নিজ বাড়ি থেকে রান্না করে নিয়ে যেতে পারবো।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুস সাত্তার বলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তিনি ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন। তিনি সবার কাছে নিজের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন। সুস্থ হওয়ার পরেই সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করবেন বলেও জানিয়েছেন। নেতাকর্মীদের তার বাড়ির সামনে ভিড় না করতেও তিনি অনুরোধ করেছেন।
সূত্রে জানা গেছে, শারীরিকভাবে অসুস্থ হলেও পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে মানসিকভাবে খুশি খালেদা জিয়া। গতকাল সবার সঙ্গে হাসি-খুশি মনে কথা বলেছেন। বুধবার রাতে ছেলে তারেক রহমান, দুই ছেলেদের বৌ এবং নাতনিদের সঙ্গেও কথা বলেন। পরিবারের সবার সঙ্গে রাতে একসঙ্গে খাবারও খান।
সেলিমা ইসলাম বলেন, গতকাল আসার পরে তো আমরা সবাই ছিলাম। তাকে ফ্রেশও লাগছিল। ২ বছর পরে পরিবারের সবাইকে পেয়ে অনেক খুশি হয়েছেন উনি। রাতে খেয়েছেনও আমাদের সঙ্গে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ম্যাডাম শারীরিকভাবে মারাত্মক অসুস্থ। তবে নিজ পরিবেশে ফিরে যাওয়ার কারণে মানসিকভাবে স্বস্তিবোধ করছেন তিনি।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা বলছেন, ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবায়েদা রহমানের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এতদিন হাসপাতালে তার যে চিকিৎসা চলছিল তা পর্যালোচনা করে গতকাল রাতেই ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা নতুন প্রেসক্রিপশন করে চিকিৎসা শুরু করেছেন। তবে এই মুহুর্তে একেবারে নতুন কোনও চিকিৎসা তারা শুরু করতে চান না। কারণ হোম কোয়ারেন্টিন শেষ হলে তার বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতে দরকার হলে নতুন চিকিৎসা শুরু করা হবে।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, গতকাল তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তার চলমান যে চিকিৎসা তা পর্যালোচনা করে কিছুটা বদল করে চিকিৎসা চালানোর জন্য প্রেসক্রিপশন করে দিয়ে এসেছেন।
সেলিমা রহমান বলেন, লন্ডনে অবস্থানরত ছেলের বৌ ডা. জোবাইদা রহমানের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থানীয় ডাক্তাররা তার দেখভাল করবেন। চিকিৎসার বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হলে তার (ডা. জোবাইদা)পরামর্শে নেওয়া হবে।
বিএনপির চেয়ারপারসের মিড়িয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বাংলা বলেন, ডা. জোবাইদা রহমানের তত্ত্বাবধানে ম্যাডামের চিকিৎসার জন্য ৬ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল গঠন করা হয়েছে। এই টিমের সদস্যরা হলেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এফএফ সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম, অধ্যাপক ডা. আব্দুল কুদ্দুস, অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান, অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন ও ডা. মামুন।