খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় গ্রামবাসীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিজেদের সদস্য নিহতের ঘটনায় মামলা করেছে বিজিবি। মামলায় বিজিবির গুলিতে নিহতরাসহ ৬০-৭০ জন গ্রামবাসীকে আসামি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৫ মার্চ) মাটিরাঙ্গা থানায় মামলা দায়েরের পর গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকাছাড়া হয়েছেন গ্রামের পুরুষ সদস্যরা। অন্যদিকে স্বজন হারানোর পরেও উল্টো মামলা দিয়ে হেনস্তার অভিযোগ এনে ক্ষোভ জানিয়েছে গ্রামবাসী। মামলার পর থেকে ঘটনাস্থল গাজীনগরের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এলাকায় বিরাজ করছে থমথমে পরিস্থিতি।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, সেদিন বিজিবির হাবিলদার মো. ইসহাক কোনও ধরনের উসকানি ছাড়াই আহাম্মদ আলী, আকবর আলী, সাহাব মিয়া (মুছা মিয়া) ও মফিজ মিয়াসহ নিরপরাধ মানুষদের গুলি করে হত্যা করেছেন। কিন্তু সত্য ঘটনাকে আড়াল করতেই উল্টো সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় ১৯ জনের নামোল্লেখ করা হলেও অজ্ঞাতনামা আরও ৬০-৭০ জনকে আসামি করায় গোটা গ্রামের সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
বিজিবির গুলিতে নিহত মো. মফিজ মিয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, আমি স্বামীকে হারিয়েছি। আমার মেয়ের জামাইকে হারিয়েছি। আমার ছেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আমাদেরকে গুলি করে আবার আমাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। স্বামীসহ স্বজনদের গুলি করে হত্যার দায়ে বিজিবির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় মো. দুলাল মিয়া বলেন, ওই দিনের ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সামনে সত্য কথা বলায় গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে বিজিবি মিথ্যা মামলা করেছে। আমরা বাড়িঘরে থাকতে পারছি না। মামলার পর ভয় আর আতঙ্কে সারারাত জঙ্গলে কাটিয়েছি।
মো. হাবিবুর রহমান বলেন, সেদিন সামনে থেকে ঘটনা দেখেছি। আমরা সাংবাদিকদের সত্য ঘটনা জানিয়েছি। এখন আমরা দোকান খুলতে পারি না। এখন তারা (বিজিবি) মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করছে।
এদিকে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন কাজ করছে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, সাধারণ মানুষ যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটি কাজ শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী রবিবারের মধ্যে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার মাটিরাঙ্গার গাজীনগরে পিডিবির নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ লাইনের জন্য কাটা পড়া গাছ স’ মিলে নেওয়ার পথে বিজিবির সঙ্গে গ্রামবাসীর বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষে গুলিতে এক বিজিবি সদস্যসহ পাঁচজন নিহত হন। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করছে। আগামী রবিবার (৮ মার্চ) কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে।