চট্টগ্রাম: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিয়েছেন এম জিল্লুর করিম শরীফি। যাচাই-বাছাই শেষে তার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেছে রিটার্নিং কার্যালয়।
তবে বাস্তবে এম জিল্লুর বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। এভাবে পদে থেকে ভিন্ন দলের মনোনয়ন নিয়ে দলীয় নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
একই সঙ্গে তাকে দ্রুত দল থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেন তারা।
এদিকে, দলীয় পরিচয় গোপন করে ভিন্ন দলের মনোনয়ন নেওয়া নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মধ্যে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
কেউ কেউ এর পেছনে এম জিল্লুর ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে বলে দাবি করেন। কারণ নিয়মানুযায়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় মোট ভোটারের এক শতাংশ লোকের সই সংযুক্ত করে কাগজপত্র যোগ করতে হয়।
অনেক সময় এক্ষেত্রে এত লোকের সই যোগাড় করা যায় না। আবার সই নিয়ে জালিয়াতি করলে মনোনয়ন বাতিল করে রিটার্নিং কার্যালয়। এই জটিলতা থেকে হয়তো মুক্তি পেতে এম জিল্লুর প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন।
অভিযোগ অস্বীকার করে ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের এম জিল্লুর করিম শরীফি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। আগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কমিটির সভাপতি ছিলাম। বর্তমানে এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের কমিটিই নেই।
তবে ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান তালুকদার বলেন, এম জিল্লুর করিম শরীফি ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন।
বাঁশখালী উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ছনুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এম জিল্লুর করিম শরীফি বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হয়েছেন। বৈঠক করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি থেকে অন্য দলের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে পারবে না। আমাদের কাছে কোন অভিযোগ করেনি, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, দলীয় পদে থেকে অন্য দলের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ নেই। দলের সব পদ থেকে পদত্যাগ করে অন্য দলের প্রার্থী হতে পারবেন।
জানা গেছে, সোমবার (৪ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কার্যালয়ে চট্টগ্রাম-১৬ আসনে মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীদের যাচাই-বাছাই হয়। এতে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়া মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ কংগ্রেসের এম জিল্লুর করিম শরীফিসহ মোট ১০ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। তবে ঋণ খেলাপি হওয়ায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আশীষ কুমার শীল ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরীর মনোনয়ন বাতিল হয়।
প্রসঙ্গত, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, এবং ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচারণা চলবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ ৭ জানুয়ারি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৬৩ লাখ ৯৬৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৩২ লাখ ৭৯ হাজার ৬২ জন এবং নারী ভোটার ৩০ লাখ ২১ হাজার ৯০২ জন।