কক্সবাজারের টেকনাফের জাদিমোরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের শেষ প্রান্তে ‘এডরা’ পাহাড়ে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (৩ মার্চ) বেলা ১২টার দিকে ওই পাহাড়ে গুলির শব্দ পান সেখানকার রোহিঙ্গারা। তারা জানান, এই পাহাড় থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক অপরাধের নিয়ন্ত্রণকারী জকির ডাকাত স্থানীয় এক শ্রমিক নেতাকে ফোনে হুমকি দিয়েছে। এ ঘটনায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ সিপিসি-১ ক্যাম্পের ইনচার্জ মির্জা শাহেদ মাহাতাব বলেন, ‘জকির ডাকাতসহ একটি দল এডরা পাহাড়ে গুলি বর্ষণ করেছে বলে রোহিঙ্গাদের কাছে খবর শুনেছি। ডাকাতদের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান চলছে। কেউ আইনের বাইরে নয়, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে স্থানীয় শ্রমিক নেতাকে হুমকির বিষয়টিও শুনেছি। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
স্থানীয় ওই শ্রমিক নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘মঙ্গলবার সকালে আমার ফোনে একটি বাংলালিংক নম্বর থেকে কল দিয়ে জকির ডাকাত হিসেবে পরিচয় দেয়। এরপর সে বলে, এখনও আসল লোকজন বেঁচে আছে। এরপর সে আমার বাবার নাম উল্লেখসহ হুমকি দেয় যেন রোহিঙ্গা নেতাদের নিয়ে বৈঠক না করা হয়।’
রোহিঙ্গারা জানায়, মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে ডাকাত জকিরসহ একটি দল অস্ত্র নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এডরা পাহাড়ের একপাশে এসে দাঁড়ায়। পরে সেখান থেকে নেমে যেখানে র্যাবের সঙ্গে গোলাগুলি হয়েছিল সেখানে এসে বেশ কিছু গুলি চালায়। এসময় আশপাশের লোকজন ভয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এই ঘটনার পর পুরো ক্যাম্পে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যাম্পের কিছু লোক জকির বাহিনীর সোর্স হিসেবে কাছ করছে। রোহিঙ্গাদের চলাচল সীমিত করে দিয়েছে তারা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২২ আগস্ট রাতে জাদিমোরায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক (৩০) সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হওয়ার পর ডাকাত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে জোরদার অভিযান শুরু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো।
সাত জন নিহতের ঘটনায় মামলা
র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় টেকনাফ মডেল থানায় খুন, অস্ত্র ও ডাকাতির প্রস্তুতির আইনে তিনটি মামলা রুজু করা হয়েছে। সোমবার (২ মার্চ) রাতে র্যাব-১৫ টেকনাফ ক্যাম্পের ডিএডি নিরঞ্জন রাজ বংশি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি। তবে বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ সিপিসি-১ ক্যাম্পের ইনচার্জ মির্জা শাহেদ মাহাতাব বলেন, ‘রোহিঙ্গা ডাকাত নিহতের ঘটনায় তিনটি মামলা রুজু করা হয়েছে। ডাকাতদের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’
সোমবার (২ মার্চ) টেকনাফের জাদিমোরা ও শালবনের পাহাড়ে র্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সাত রোহিঙ্গা ডাকাত নিহত হয়। এ ঘটনায় তিনটি বিদেশি পিস্তল, ১২ রাউন্ড গুলি, সাতটি ওয়ার শ্যুটার গান ও ১৩ রাউন্ড কার্তুজের গুলি উদ্ধার করা হয়।
টেকনাফ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এবিএমএস দোহা বলেন, ‘রোহিঙ্গা ডাকাত নিহতের ঘটনায় র্যাব সদস্য বাদী হয়ে রাতে তিনটি মামলা দায়ের করেন। এ বিষয়ে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সুজিত চন্দ্র দে জানান, নিহত সাত জনের মরদেহ কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য নেওয়া হয়েছে। তবে এ পর্যন্ত তাদের স্বজনদের কেউ মৃতদেহ নিতে আসেনি।