জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ৪৯ বছরে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে মাত্র পাঁচবার। সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালে। এদিকে নিয়মিত সমাবর্তন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের অর্জিত ডিগ্রির মিলছে না আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। মূল সনদপত্রের পরিবর্তে সাময়িক সনদপত্র নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়তে হচ্ছে ডিগ্রিধারীদের। নিয়মিত সমাবর্তন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ‘আন্তরিকতা’ ও ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এ বছরের শেষের দিকে সমাবর্তন আয়োজনের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ২৬ বছরে ১৯৯৭ সালে প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর ২০০১ সালে দ্বিতীয়, ২০০৬ সালে তৃতীয়, ২০১০ সালে চতুর্থ এবং ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত হয় সর্বশেষ সমাবর্তন। সর্বশেষ পঞ্চম সমাবর্তনে অংশ নেওয়া ৯ হাজার গ্র্যাজুয়েট, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী মূল সনদপত্র হাতে পান।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালটির ৪০ থেকে ৪৩তম আবর্তনের প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী তাদের স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি বিভাগের ৪৪তম আবর্তনের শিক্ষার্থীরাও স্নাতক পর্যায়ের পড়াশোনা শেষ করে ফেলেছেন। কয়েকটি বর্ষের এমফিল ও পিএইচডি গবেষকরা নিয়েছেন তাদের ডিগ্রি। তবে তারা সবাই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি বঞ্চিত।
এদিকে নিয়মিত সমাবর্তন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সম্প্রতি দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সময় জাবি কর্তৃপক্ষের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে সমালোচনা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও করেছেন শিক্ষার্থীরা।
নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজনের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে তোলা হলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেনি বলেও অভিযোগ করেছেন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট ক্যাটাগরির সিনেট সদস্য ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দীন খান। তিনি বলেন, ‘সমাবর্তন শিক্ষাজীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু ৪৯ বছরে মাত্র পাঁচবার সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়া প্রমাণ করে কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার পাশাপাশি দক্ষতারও অভাব রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকভাবে অর্থের অপচয় হয়, অথচ সমাবর্তনের তারা আয়োজন করতে পারে না। এটা কর্তৃপক্ষের বড় ব্যর্থতা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪২তম আবর্তনের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নওশাদ নাবিল বলেন, ‘প্রতিটি শিক্ষার্থী চায় শিক্ষাজীবন শেষে রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সনদ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে যোগদান করতে। তবে দুঃখের বিষয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনিয়মিত হওয়ায় অনেকে সেই সুযোগ পাচ্ছেন না।’
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষাবান্ধব নয় উল্লেখ করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হক রনি বলেন, ‘গ্র্যাজুয়েটরা সমাবর্তনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিতে চান। তবে কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবে নিয়মিত সমাবর্তন করা হচ্ছে না।’
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক সোহানুর রশিদ মুন গাজী বলেন, ‘ইউজিসি প্রতিবছর বিশাল বাজেট দিচ্ছে, তবু কর্তৃপক্ষ সমাবর্তনের বিষয়ে উদাসীন। এতে কর্তৃপক্ষের অদক্ষতাই প্রমাণ করে।’
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাবি শাখার আহ্বায়ক শোভন রহমান বলেন, ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সমাবর্তন না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।’
তবে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শেষ পর্যন্ত এ বছরেই সমাবর্তনের আয়োজন করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) রহিমা কানিজ বলেন, ‘এ বছর সমাবর্তন করার জন্য আমরা সক্রিয় চিন্তাভাবনা করছি। আগামী সপ্তাহ থেকেই এ বিষয়ে কার্যক্রম শুরু হবে। ভবিষ্যতে যেন সময়টা আরও কমিয়ে আনা যায় এবং নিয়মিত সমাবর্তন করা যায় সেই চেষ্টা চলছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) নুরুল আলম বলেন, ‘আগামী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি দেবো। তিনি যখন আমাদের সময় দেবেন, তখনই সমাবর্তন করবো।’
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, ‘আমরা এ বছরই সমাবর্তন আয়োজন করবো। বছরের শেষদিকে, অর্থাৎ নভেম্বর মাস নাগাদ আমরা এ অনুষ্ঠান করতে পারি।’ মহামান্য আচার্যকে এ বিষয়ে শিগগিরই চিঠি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।