নান্দনিক আর অত্যাধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত হতে যাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। আগামী ২৮ ডিসেম্বর নতুন এ টার্মিনালের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাইকার অর্থায়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য এ টার্মিনালভবন হবে তিন তলাবিশিষ্ট। দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার আয়তনের এ ভবন ও টার্মিনালের নির্মাণ কাজ শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে চার বছর। এটি চালু হলে নতুন করে ১২ মিলিয়ন যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। ফলে নতুন-পুরাতন টার্মিনাল মিলিয়ে মোট ২০ মিলিয়ন যাত্রীকে বছরে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।
দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপনার নকশা করেছেন স্থপতি রোহানি বাহারিন। তিনি এনওসিডি-জেভি জয়েন্ট ভেঞ্চার পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সিপিজি করপোরেশন প্রাইভেট লিমিটেডের (সিঙ্গাপুর) স্থপতি।
উন্নত বিশ্বের বিমানবন্দরের মতোই অত্যাধুনিক সব নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার করা হবে এ স্থাপনায়। থাকবে অত্যাধুনিক লাউঞ্জ, চেক ইন কাউন্টার, গমন ও আগমনী কাউন্টার, স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টার, দোকান, রেস্টুরেন্ট, শপিং মলসহ অন্যান্য সুবিধা। এটি চালু হলে বদলে যাবে দেশের প্রধান এ বিমানবন্দরের যাত্রী সেবার মান। এর মধ্য দিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দর নতুনভাবে বাংলাদেশকে বিশ্বাসীর কাছে তুলে ধরবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বাধীনতার পর গত প্রায় অর্ধশত বছরে বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন শিল্পে তেমন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। তাই এ শিল্পে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। এ খাতে নতুন করে সরকারের বিশাল এ বিনিয়োগ অ্যাভিয়েশন খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্য মতে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালে ২৪টি বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে। যদিও প্রথম ধাপে চালু করা হবে ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ। বহির্গমনের জন্য ১৫টি সেল্ফ সার্ভিস চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ১১৫টি চেক ইন কাউন্টার থাকবে। এছাড়াও ১০টি স্বয়ংক্রিয় পাসপোর্ট কন্ট্রোল কাউন্টারসহ থাকবে মোট ৬৬টি ডিপারচার বা গমন ইমিগ্রেশন কাউন্টার থাকবে। আগমনীর ক্ষেত্রে পাঁচটি স্বয়ংক্রিয় চেক ইন কাউন্টারসহ মোট ৫৯টি পাসপোর্ট ও ১৯টি চেক ইন অ্যারাইভাল কাউন্টার থাকবে। এর বাইরে টার্মিনালে ১৬টি আগমনী ব্যাগেজ বেল্ট স্থাপন করা হবে। এছাড়া অতিরিক্ত ওজনের ব্যাগেজের জন্য চারটি পৃথক বেল্ট স্থাপন করা হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য তৃতীয় টার্মিনালের সঙ্গে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং ভবন নির্মাণ করা হবে। এতে ১০৪৪টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের সঙ্গে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ পথ ও উড়াল সেতু নির্মাণ করা হবে, যার মাধ্যমে মেট্রোরেল ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ ব্যবস্থা থাকবে। এতে থাকবে আন্তজার্তিক মানের অত্যাধুনিক অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা। এছাড়া লাউঞ্জ, দোকান, রেস্টুরেন্টসহ সংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রেই আর্ন্তজাতিক মানের যাত্রীসেবার সুবিধা রাখা হবে।
বেবিচক জানায়, তৃতীয় টার্মিনাল প্রকল্পের প্রথম ধাপের সঙ্গে বর্তমান টার্মিনাল ভবনগুলোর কোনও যোগযোগ ব্যবস্থা রাখা হবে না। তবে প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে কানেকটিং করিডোরের মাধ্যমে পুরনো টার্মিনাল ভবনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। বর্তমানে ভিভিআইপিদের জন্য পৃথক যে কমপ্লেক্স রয়েছে, সেটিও ভেঙে ফেলা হবে। তবে তৃতীয় টার্মিনালে পৃথকভাবে স্বতন্ত্র কোনো ভিভিআইপি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে না। তৃতীয় টার্মিনাল ভবনের ভেতরে দক্ষিণ পাশে সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ভিভিআইপি জায়গা রাখা হবে। এছাড়া নির্মিতব্য এ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালটি সরিয়ে নেওয়া হবে।
কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, শাহজালাল বিমানবন্দরের উত্তর পাশে রয়েছে আমদানি ও রফতানি কার্গো ভিলেজ। বর্তমান কার্গো ভিলেজের উত্তর পাশে যথাক্রমে ৩৫ হাজার ৮৬৩ বর্গমিটার ও ২৭ হাজার ১৪৪ বর্গমিটার আয়তনের সর্বাধুনিক সুবিধাসম্পন্ন দুটি পৃথক আমদানি ও রফতানি কার্গো ভিলেজ নির্মাণ করা হবে।
নতুন এ প্রকল্প নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, অনেক দেশই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে চায়, কিন্তু আমরা তাদের জায়গা দিতে পারছি না। এর পরিপ্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এটি তার স্বপ্নের প্রকল্প। এট প্রকল্প চালু হলে বিশ্বের অনেক দেশকেই আমরা ফ্লাইট চালুর সুবিধা দিতে পারবো।