ভারতের আসাম রাজ্যে গঠিত ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের প্রায় ডজনখানেক সদস্য করোনা মোকাবেলায় সরকারি তহবিলে অর্থ দিয়েছেন। তবে এতে তারা শর্ত হিসেবে জুড়ে দিয়েছেন, ‘এই অর্থ যেন তাবলিগ জামাত, জিহাদি বা জাহিল (অশিক্ষিত)-দের ত্রাণে না লাগে।’ রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার কাছে পাঠানো এক চিঠিতে তীব্র মুসলিমবিদ্বেষী এসব বিতর্কিত শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তারা।.
দৃশ্যত জাহিল বলতে তারা কটাক্ষপূর্ণভাবে মুসলিমদের ইঙ্গিত করেছেন।
আসামের মুসলিমবিদ্বেষী নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে, তাদের আপিল করতে হয় এই ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে। এই ট্রাইব্যুনালের সদস্যরা বিচারকের ক্ষমতাসম্পন্ন। তারাই স্থির করেন কার আপিল গৃহীত হবে। অন্যভাবে বললে, কাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব বহাল থাকবে এবং কাদের কথিত ‘বিদেশি’দের জন্য নির্দিষ্ট বন্দিশিবিরে পাঠানো হবে সেটা নির্ধারণের এখতিয়ার তাদেরই।
এই প্রবল ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রাইব্যুনাল সদস্যরা কীভাবে প্রকাশ্যে এরকম মুসলিমবিদ্বেষী মন্তব্য করতে পারেন, তার সমালোচনায় সরব হয়েছেন অনেক অ্যাক্টিভিস্ট ও মানবাধিকার কর্মী।
আসামের সুপরিচিত মানবাধিকার আইনজীবী আমন ওয়াদুদ বিবিসিকে বলেন, ‘এই ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ মানসিকতার লোকজনের ওপর কীভাবে নাগরিকত্বের ফয়সালা করার ভার ছেড়ে রাখা হয়েছে তা তো ভাবতেই পারি না!’
তিনি বলেন, ‘নাগরিকত্ব হল সংবিধানে প্রদত্ত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। আর সেটা থাকবে কি না, তা ঠিক করছেন এমন সব লোকজন যারা প্রকাশ্যে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকজনকে জিহাদি বা জাহিল বলে গালিগালাজ করছেন।’.
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সমাজকর্মী নন্দিনী সুন্দর বলেন, ‘ওই চিঠির বক্তব্য এক কথায় মারাত্মক ও শকিং!’
ওই চিঠিতে আসামের বিভিন্ন জেলার ১২ জন ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল সদস্য সম্মিলিতভাবে ‘কোভিড-১৯ থেকে মানবতাকে রক্ষায়’ যৌথভাবে ৬০ হাজার রুপিরও বেশি দান করার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু সেই সঙ্গেই তারা যোগ করেছেন, ‘আমাদের একটাই প্রার্থনা থাকবে, এই অর্থ দিয়ে যাতে তাবলিগ জামাত সদস্য, জিহাদি এবং জাহিলদের কোনও রকম সাহায্য না করা হয়।’
চিঠির মূল স্বাক্ষরকারী, বাকসা জেলার ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল সদস্য ও আইনজীবী কমলেশ কুমার গুপ্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাকে জানিয়েছেন, ‘চিঠিতে যা লেখা হয়েছে হয়েছে, তা নিয়ে আমি কোনও আলোচনা করতে চাই না।’ তবে চিঠিটি ফাঁস হওয়ার পর সমালোচনার মুখে তিনি এখন দাবি করছেন, চিঠিটি না কি শেষ পর্যন্ত সরকারের কাছে পাঠানোই হয়নি।
ওই চিঠিতে স্বাক্ষরদাতাদের একজন কামরূপ জেলার ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল সদস্য পম্পা চক্রবর্তী। তিনি গত বছর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ৩০ বছর ধরে কাজ করা মোহাম্মদ সানাউল্লাহ নামে এক ব্যক্তির নাগরিকত্বের আপিল খারিজ করে দিয়ে তাকে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সুবেদার পদ থেকে অবসর নেওয়া মোহাম্মদ সানাউল্লাহ এরপর গুয়াহাটি হাইকোর্টে জামিন পান। ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে তার আপিল এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সূত্র: বিবিসি।