রাখাইনে গণহত্যার আলামত পায়নি মিয়ানমার সরকার

মিয়ানমারের রাখাইনে গণহত্যার কোনও আলামত পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে দেশটির সরকার নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ প্যানেল। তারা জানায়, এই হত্যাযজ্ঞে একাধিক পক্ষ ভূমিকা রেখেছে এমন আলামত রয়েছে তাদের কাছে। কিন্তু গণহত্যার উদ্দেশ্যে এই অভিযান চালানো হয়েছে এমন কোনও আলামত তারা পাননি।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এই নৃশংসতা বিচারে ২০১৮ একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি গড়ে তোলে মিয়ানমার সরকার। সেখানে নিয়োগ দেওয়া হয় দুজন দেশি ও দুজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ। যাদের মধ্যে ছিলেন ফিলিপাইনের কূটনীতিক রোজারিও মানালো এবং সাবেক জাপানি রাষ্ট্রদূত কেনজো ওশিমা।

কমিটি জানায়, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাবিরোধী সেনাবাহিনী নেতৃত্বাধীন অভিযানে নিরাপত্তাবাহিনীসহ ‘একাধিক পক্ষ’ সম্ভাব্য যুদ্ধাপরধাধ ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকার ‘যুক্তিসংগত কারণ’ থাকতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে নির্দোষ গ্রামবাসীকে হত্যা ও তাদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করা।

তবে তদন্তের পর ফল সম্পর্কিত বিবৃতির দিতে গিয়ে কমিটি এই অপরাধের দায় সশস্ত্র রোহিঙ্গা গোষ্ঠী ওপর চাপিয়েছে। তারা জানায়, নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এবং এটা একটি অভ্যন্তরীণ সশস্ত্র সহিংসতা। বিবৃতিতে বলা হয়, কমিটি এমন কোনও আলামাত পায়নি যাতে করে রাখাইনে মুসলিম কিংবা অন্য জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে এমন হামলা চালানো হয়েছে তা প্রমাণিত হয় ।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘আলামতের অপ্রতুলতা বিতর্কের তৈরি করে। কিন্তু কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার জন্য অভিযান চালানো এমনর যুক্তির স্বপক্ষে প্রমাণের স্বল্পতা রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে গণহত্যা স্বীকৃতির জন্য প্রয়োজনীয় আলামতও পাওয়া যায়নি।  ইতোমধ্যে এই প্রতিবেদন সরকারের কাছে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং খুব শিগগিরই তা প্রকাশ করা হবে বলেও জানানো হয়।

এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, চোখে ধুলা দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের বছরের পর বছর নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। আমাদের অনেকে মারা গেছে, অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। আমাদের সন্তানদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এসব যদি গণহত্যা না হয়ে থাকে তবে এসব কি?

এর আগে রাখাইনে সেনা অভিযানকে গণহত্যা আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এ মামলা করে গাম্বিয়া। মামলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সংঘাত আরও তীব্রতর না হওয়ার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানায় দেশটি।

এছাড়া জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনও একই কথা বলেছিলো।  ২০১৭ সালেই জাতিসংঘের অনুসন্ধানী দল তাদের অনুসন্ধানে জানিয়েছিল, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘবদ্ধ ধর্ষণকে জাতিগত নিধনের অস্ত্র বানিয়েছে মিয়ানমার। এরপর ২০১৮ সালে ওই অনুসন্ধানী দল পাঁচটি আলামত হাজির করে জানায়, রোহিঙ্গাদের বিতাড়নে কাঠামোবদ্ধ যৌন নিপীড়নকে ব্যবহার করেছে সে দেশের সেনাবাহিনী। একে গণহত্যার আলামত আখ্যা দিয়েছিল তারা। পরবর্তীতে আরও একটি ঘটনাকে যুক্ত করে সংস্থাটির ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন দৃঢ়ভাবে জানায়, গণহত্যার উদ্দেশ্যেই সেখানে যৌন নিপীড়নকে ব্যবহার করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *