লকডাউন ছাড়াই দ. কোরিয়ার করোনা সাফল্যের নেপথ্যে

কোনও শহর লকডাউন করা হয়নি, বন্ধ হয়নি পরিবহন ও আন্তর্জাতিক প্রবেশ ছিল উন্মুক্ত। এরপরও দক্ষিণ কোরিয়া যে শুধু করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে পেরেছে সফলভাবে তা নয়, দেশটিতে মোট আক্রান্ত ৯ হাজার ১৩৭ জনের মধ্যে ৪১ শতাংশকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলেছে। আর বুধবার পর্যন্ত দেশটিতে মৃতের সংখ্যা মাত্র ১৩১ জন।

বুধবার জাতিসংঘের দুর্যোগ প্রশমণ কার্যালয়ের (ইউএনডিআরআর) উদ্যোগে আয়োজিত এক বিশেষ ওয়েবিনারে মিয়ংজি হাসপাতালের সিইও ও কোরিয়ান হাসপাতাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ড. লি ওয়াং-জুন বলেছেন, দক্ষিণ কোরিয়া ৩ হাজার ৭৩০ জন করোনা আক্রান্তকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়েছে। তারা সম্পুর্ণ সুস্থ। এই অনলাইন সেমিনারটিতে ১০৫টি দেশের ৯০০ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অংশগ্রহণ করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজ্ঞতা জানতেই তাদের অংশ গ্রহণ।

ড. লি ভাইরাসের বিস্তার রোধে দক্ষিণ কোরিয়ার কৌশলের চারটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি তুলে ধরেন। ইউএনডিআরআর’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম নীতি হলো কোরিয়ান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের মাধ্যমে নতুন আক্রান্তের তথ্য হালনাগাদ করতে সম্পূর্ণ উন্মুক্ততা ও স্বচ্ছতা। মিডিয়াসহ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে সব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। কোথায়, কখন এবং কীভাবে সংক্রমণ শনাক্ত এবং তা যাচাই করা হলো তা তুলে ধরা হয়েছে।

২০১৫ সালের মার্স সংক্রমণ থেকে অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হয়েছে। এর ফলে জনগণের মধ্যে আক্রান্তের বিষয় নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। এছাড়া মহামারির সময় ভাইরাসের বিস্তার রোধে করণীয় সম্পর্কেও তারা অবহিত ছিলেন। ড. লি বলেন, কোনও শহর লকডাউন ছিল না, কোনও পরিবহন বন্ধ হয়নি এবং আন্তর্জাতিক যাত্রীদের দেশে প্রবেশ এখনও উন্মুক্ত আছে।

দ্বিতীয় নীতি হলো সংবরণ ও প্রশমন। আক্রান্ত হিসেবে সন্দেহভাজন ও নিশ্চিত আক্রান্তদের শনাক্ত করা। প্রশমনের ক্ষেত্রে অন্তর্ভুক্ত ছিল সামাজিক দূরত্ব প্রচারণার। যা ফেব্রুয়ারির শেষ দিকেই দায়েগু এলাকায় বড় ধরনের সংক্রমণের পরই শুরু করা হয়েছিল।

দায়েগুর লোক সংখ্যা ২৫ লাখ। একদিনে এখানে ৭৩৫ জন আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়। বিপরীতে সিউলে লোকসংখ্যা আড়াই কোটি এবং সেখানে একদিনে ৭৫ জন আক্রান্ত হন। দক্ষিণ কোরিয়া দায়েগুতে কোভিড-১৯ এর সামাজিক সংক্রমণ রোধ করতে পেরেছে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে। যদিও এলাকাটিতে সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয় এবং বড় ধরনের জমায়েতে স্বেচ্ছা নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু কোন লকডাউন ছিল না।

ড. লি বলেন, চতুর্থ নীতি হলো গণহারে পরীক্ষা এবং দ্রুত সন্দেহভাজন আক্রান্তদের চিহ্নিত করা। পরীক্ষার সরঞ্জামের মজুদ ও সরবরাহ বৃদ্ধি করা হয় যাতে করে সপ্তাহে চার লাখ ৩০ হাজার মানুষকে পরীক্ষা সম্ভব হয়। সূত্র: টাইমস অব  ইন্ডিয়া

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *