চট্টগ্রাম পিটিআইয়ে নারী প্রশিক্ষণার্থীদের হলে দুর্বৃত্তের হামলা

চট্টগ্রামের পটিয়ায় প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) নারী প্রশিক্ষণার্থীদের হলে ভাঙচুর চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। নারী প্রশিক্ষণার্থীদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির চার ইনস্ট্রাক্টরকে প্রত্যাহারের একদিনের মাথায় এ ঘটনা ঘটলো। মঙ্গলবার (১০ মার্চ) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইনস্টিটিউটের প্রীতিলতা হলে এ ভাঙচুর চালানো হয়। এ ঘটনায় নারী প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ইনস্টিটিউটের ২০২০-২১ সেশনের প্রশিক্ষণার্থী স্বপন জলদাশ বলেন, ‘রাত সাড়ে ১২টায় প্রীতিলতা হল থেকে একজন সহকর্মী কল করে জানান মুখোশ পরা তিন-চারজন যুবক তাদের হলের গেটে ভাঙচুর করছে। খবর পেয়ে আমরা দ্রুত সেখানে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। তাদের ছোড়া পাথরে ওই হলের জানালার কাচ ভেঙে যায়। একই দিন রাতে বেগম রোকেয়া হলের জানালার কাচও ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা।’

এ বিষয়ে একাধিক নারী প্রশিক্ষণার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা এসে গালাগাল করতে থাকে। জোরে চিৎকার করে গেট খুলে দিতে বলে। পরে আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ হল থেকে আমাদের পুরুষ সহকর্মীরা এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়।’

এই ঘটনার সঙ্গে চার ইনস্ট্রাক্টরকে প্রত্যাহার করার বিষয়টি জড়িত বলে তারা অভিযোগ করেন। নারী প্রশিক্ষণার্থীরা বলেন, ‘চার ইনস্ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে আমরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করায় পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। বিষয়টি নিয়ে ফোনে আমাদের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

এদিকে, এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বুধবার (১১ মার্চ) দুপুরে ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন প্রশিক্ষণার্থীরা। বেগম রোকেয়া হলের সামনে থেকে মিছিলটি বের হয়ে প্রীতিলতা হল হয়ে সুপারিনটেনডেন্ট অফিসের সামনে গিয়ে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলের সময় প্রশিক্ষণার্থীরা স্লোগান দিতে থাকেন– ‘রাতের আঁধারে হামলা কেন? বিচার চাই, বিচার চাই’। পরে সেখানে প্রশিক্ষণার্থীদের কয়েকজন বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বলেন, ‘নারী প্রশিক্ষণার্থীদের যৌন হয়রানির বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে একটি মহল এই হামলা চালিয়েছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। তদন্ত করে যতদিন পর্যন্ত জড়িতদের আইনের আওতায় না আনা হবে ততদিন আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করবো। যারা দীর্ঘদিন ধরে প্রশিক্ষণার্থী আমাদের বোনদের মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করে আসছে, আমরা সেই ইনস্ট্রাক্টরদের শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।’ পরে এ ঘটনায় তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। লিখিত অভিযোগে তারা ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানান।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউটের সুপারিনটেনডেন্ট তপন কুমার দাশ বলেন, ‘ঘটনার পর কাল রাতে প্রশিক্ষণার্থীরা আমাকে অবহিত করলে আজ (বুধবার) সকালে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) বিষয়টি জানাই। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কে বা কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছে আমরা নিশ্চিত নই। এই ঘটনার সঙ্গে চার ইনস্ট্রাক্টরকে প্রত্যাহার করার কোনও সম্পর্ক আছে কিনা তাও নিশ্চিত নই। ঘটনার পর আমরা প্রশিক্ষণার্থীদের সর্তক থাকতে নির্দেশনা দিয়েছি। নারী প্রশিক্ষণার্থীদের নিরাপত্তার জন্য তাদের এক হলে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রীতিলতা হলের ২৪ জন প্রশিক্ষণার্থীকে বেগম রোকেয়া হলে রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে পটিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জব্বারুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পর ইনস্টিটিউটের সুপারিনটেনডেন্ট লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এরপর আমাদের একটি টিম ওই প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে। ইনস্টিটিউটের এক বাবুর্চিসহ চারজনকে থানায় আনা হয়। উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এ ঘটনায় আমাদের একটি টহল টিম রাতে ইনস্টিটিউট এলাকায় অবস্থান করবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা জাহান উপমা বলেন, ‘কাল রাতে নারী প্রশিক্ষণার্থীদের হলে ভাঙচুর করা হয়েছে এমন একটি অভিযোগ পেয়েছি। এটি নিয়ে আমরা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। দুই পক্ষ দুই রকম বক্তব্য দিয়েছে। এটি কি সাধারণ ঘটনা, নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কেউ ঘটিয়েছে তা তদন্ত করতে থানা পুলিশকে বলা হয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।’

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার রাতে নগরীর কালামিয়া বাজার এলাকায় নিজ বাসায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন পিটিআইয়ের ইনস্ট্রাক্টর দেবব্রত বড়ুয়া।

আত্মহত্যাচেষ্টার আগে তিনি সামাজিক যোগযোগমাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়ে অভিযোগ করেন, ইনস্ট্রাক্টর (শারীরিক শিক্ষা) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন, ইনস্ট্রাক্টর (সাধারণ) জসীম উদ্দিন, ইনস্ট্রাক্টর (কম্পিউটার সায়েন্স) রবিউল ইসলাম, ইনস্ট্রাক্টর (চারু ও কারুকলা) সবুজ কান্তি আচার্য্য নানা কৌশলে নারী প্রশিক্ষণার্থীদের ধর্ষণ এবং যৌন নির্যাতন করতেন। পরে এ ঘটনায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-পরিচালকের কার্যালয় থেকে একটি এবং চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও একটি কমিটি গঠন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *