সাড়ে তিন বছরেই প্রভাষক থেকে অধ্যক্ষ!

রংপুরের পীরগাছার চৌধুরানী ফাতেহিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আরবি বিভাগে প্রভাষক পদে ২০১৫ সালে নিয়োগ পান মোখলেছুর রহমান। উপাধ্যক্ষ থাকার পরও চাকরির সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে। অভিযোগ রয়েছে, নিজের নিয়োগ ও অধ্যক্ষের দায়িত্ব বৈধ করতে মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতির জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সই জাল করে ডিও (আধা-সরকারি পত্র) তৈরি করে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেন মোখলেছ। তাকে নিয়োগ দেওয়া ওই গভর্নিং বডির সভাপতিও অবৈধ ছিল। অবশেষে এ ঘটনার তদন্তে নেমেছে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতর। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মোখলেছ।

মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আফাজ উদ্দিন বলেন, ‘জালিয়াতি করে নিয়োগ ও  মন্ত্রীর সই জাল করে ডিও তৈরি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চৌধুরানী ফাতেহিয়া ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতির যোগসাজশে জালিয়াতি করে মোখলেছুর রহমান প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। উপাধ্যক্ষকে পাশ কাটিয়ে চাকরির সাড়ে তিন বছরের মাথায় সরাসরি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান তিনি। দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ নিয়মিত করতে গত বছর অনুমোদন চেয়ে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেন।

বিষয়টি জানাজানির পর গত বছরের ১ অক্টোবর বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরে লিখিত অভিযোগে জানান, ‘মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতির যোগসাজশে প্রভাষক পদে যোগ্যতা না থাকার পরও নিয়োগ পান মোখলেছুর রহমান। উপাধ্যক্ষ থাকার পরও জ্যেষ্ঠতা ভঙ্গ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নেন তিনি। মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতির বৈধতার জন্য আমার সই জাল করে ডিও লেটার তৈরি করেন। এ বিষয়ে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানাই।’

বাণিজ্যমন্ত্রীর অভিযোগের পর গত ১ জানুয়ারি মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আফাজ উদ্দিন রংপুর জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে জালিয়াতির বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার মাধ্যমিক অ্যাকাডেমির সুপারভাইজার ফারুকুজ্জামান ডাকুয়া দাবি করেন, ‘ গত মেয়াদে সংসদ সদস্য থাকাকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সই জাল করেছিলেন মোখলেছুর রহমান।’

মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সাবেক সভাপতি আরিফুল হক লিটন বলেন, ‘গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি এবং নিজের নিয়োগ বৈধ করতেই মোখলেছুর বাণিজ্যমন্ত্রীর সিল ও সই  জালিয়াতি করেছিলেন। এ অভিযোগে দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করে। তদন্তে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রও দিয়েছে দুদক। এছাড়া তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। তার বেতন বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। প্রভাষক পদ থেকে মোখলেছ অব্যাহতি নিয়েছেন অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য। অথচ প্রভাষক হিসেবেই বেতন তুলছেন। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি।’

অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘আমার অভিজ্ঞতা কম, উপাধ্যক্ষ থাকার পর আমি প্রভাষক থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে পারি না। কিন্তু আমাকে কমিটি নিয়োগ দিয়েছে। আমি দোষী না। আমি ২০১৫ সাল থেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্বে আছি। আমি ষড়যন্ত্রের শিকার।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *